প্রাগপুের হেম আশ্রম লালন সঙ্গীত শুনলেন তুরস্কের রাষ্ট্রদূত

কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর হেম আশ্রম পরিদর্শন করলেন এবং লালন সঙ্গীত শুনলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত প্রাগপুের হেম আশ্রম লালন সঙ্গীত শুনলেন তুরস্কের রাষ্ট্রদূতহিজ এক্সসিলেন মিস্টার মুস্তফা উসমান তুরান।

রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রাগপুর হেম আশ্রম পরিদর্শন করেন তিনি। এসময় তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।

বাংলাদেশে বসবাসরত ফরাসি নাগরিক ও লালন সাধক দেবোরাহ কিউকারম্যান জান্নাতের আমন্ত্রণে মোস্তফা ওসমান তুরান হেম আশ্রম পরিদর্শন করেন। প্রবীণ বাউল ফকির নহির শাহ এই আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা।

তুরস্কের রাষ্ট্রদূত আশ্রমে সাধু ভক্তদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং সেখানে একটি বৃক্ষ রোপণ করেন। এরপর বিকেলের দিকে ঢাকার উদ্দেশে দৌলতপুর ত্যাগ করেন।

এদিন বেলা ১১টার দিকে হেলিকাপ্টার যোগে দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের মথুরাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরে নামেন তিনি। এসময় তাকে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এজাজ আহম্মেদ মামুন ,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল জব্বার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু রাসেল রাষ্ট্রদূতকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

হেম আশ্রমের প্রতষ্ঠাতা ফকির নহির শাহ জানান, বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্ক রাষ্ট্রদূত মাননীয় মোস্তাফা ওসমান তুরান আমাদের হেম আশ্রমে পরিদর্শন করে গেলেন। বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সাধুগুরুর জীবন-যাপন, দর্শন দেখা ও বুঝতেই লালন সাধক দেবোরাহ কিউকারম্যান জান্নাতের আমন্ত্রণে এখানে ছুটে আসা।
তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে গভীর জ্ঞান বিনিময় করে গেলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্ক রাষ্ট্রদূত। একইসাথে তাঁর দেশের সূফি ইতিহাস বর্ণনা করলেন। সাধুসেবা নিলেন আমাদের বিধান অনুযায়ে, লালন সাঁইজীর বাণি শুনে গেলেন। ও একটি আম গাছ তাঁর হাতে রোপণ করেন তিনি।

মরমি সাধক ফকির লালন শাহকে নিয়ে গবেষণার জন্য সুদূর ফ্রান্স থেকে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম গবেষণার কাজে বাংলাদেশে আসেন দেবোরা কিউকারম্যান। সাধুসঙ্গে এসে লালন দর্শনের প্রেমে পড়ে যান এই নারী। তারপর আর দেশে ফিরে যাননি। এরপর প্রখ্যাত বাউল ফকির নহির শাহের শিষ্য হন। অবিবাহিত দেবোরা গুরুর আস্তানায় বসবাসকারী নহির শাহের আরেক শিষ্য রাজনকে বিয়ে করেন। এখনো গুরুর কাছে আত্মিক শান্তি ও সৃষ্টি রহস্য খুঁজতে দীক্ষা নিচ্ছেন। ফকির লালন শাহকে যতই জেনেছেন ততই তার প্রেমে পড়েছেন তিনি। বেড়েছে শ্রদ্ধা, ভক্তি ও প্রেমবোধ। বর্তমানে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বসবাস করছেন তিনি। মাঝে মাঝে ফ্রান্সে ঘুরতে যান। নাম বদল করে হয়েছেন দেবোরা জান্নাত।

উল্লেখ্য, ফকির নহির শাহ বাংলাদেশের একজন প্রবীণ সাধক ও লালনভক্ত। লালন সাঁইজির সঙ্গে তাঁর উত্তরাধিকার সম্পর্ক–লতিকার পর্যায়ক্রমটা এই রকম: ফকির লালন শাহ, ভোলাই শাহ, কোকিল শাহ, লবান শাহ ওরফে আব্দুর রব শাহ, তারপরই ফকির নহির শাহ। আব্দুর রব শাহর প্রধান খলিফা ফকির নহির একাধারে আধ্যাত্মিক গুরু, ভাবসংগীতের শিক্ষক এবং সংগীত সংগ্রাহক।

১৯৭১ সালে ফকির নহির শাহ দেশের প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ১৯৭৪ সালে গুরুবাক্য গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৪ সালে খেলাফতপ্রাপ্ত হয়ে কুষ্টিয়ার প্রাগপুরে ‘হেম আশ্রম’ প্রতিষ্ঠা করে আধ্যাত্মিক সাধনায় মগ্ন হন।

রিলেটেড পোস্ট

Leave a Comment