মিরপুরে পানের বরজসহ বসতবাড়ী পুড়ে ছাই: খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন

এসএম জামাল, কুষ্টিয়া :


কুষ্টিয়ার মিরপুরে পানের বরজসহ বসতবাড়ীতে অগ্নিকাণ্ডে ভূষ্মিভূত হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত এগারো জন কৃষকের কয়েক হাজার পিলি পানের বরজ এবং আটটি পরিবারের বসতবাড়ী পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এরমধ্যে ৫ টি পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।

মঙ্গলবার উপজেলার পোড়াদহ ইউনিয়নের বেলগাছী গ্রামে এ অগ্নিকাণ্ডে ঘটে। বসতবাড়ীতে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন সনদ, স্কুল—কলেজের সার্টিফিকেট, জমির দলিলসহ সরকারি—বেসরকারি প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র পুড়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে বেলগাছী মাঠের পান বরজের পাটকাটির বেড়ায় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। অনুকূল বাতাসে মুহূর্তের মধ্যে আগুন আশেপাশের পান বরজ ও বসতবাড়ীতে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পানবরজসহ বসতবাড়ীও পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন আমির আলী, সোহেল রানা, আছমা খাতুন, আসলাম, কুদ্দুস, সুজন, ফেরদৌস, আবু বকর, আতিয়ার, মনোয়ারা বেগম ও ইসলাম।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগুনে পুড়ে বাপ দাদার শেষ স্মৃতি গুলো এইভাবে মুছে যাবে তা কখনো কল্পনা করিনি। আটটি পরিবারের বাড়িঘর মুহুর্তেই পুড়ে ছাই হয়ে গেলও ঘর থেকে কিছুই নিয়ে বের হতে পারেনি।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঐ এলাকার কুরবান মির্জার ছেলে আমিরের পরিবার। তিনি বলেন, আমি পাউরুটি, বিস্কিট, চানাচুর, হকারি করে সংসার চালায়। আগুনে আমার ঘরবাড়ি সব পুড়ে গেছে। বাড়িতে একটি ঘরে আমার ব্যবসার দুই লক্ষ নগদ টাকাসহ আরও মালামাল ছিল, আরেকটি ঘরে দলিলপত্র ছিল সে-সবও পুড়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষিদের একজন ফেরদৌস আলী বলেন, আমার ২০০ পিলি পানের বরজ পুরোটায় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমার বরজ ভরা পান ছিল। সবেমাত্র বিক্রি করতে শুরু করেছি। এমন সময় আমার এ সর্বনাশ হলো। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।

হাজরাহাটি এলাকার সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য শাহীন আলী জানান, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এগারোজন কৃষকের অন্তত দুই হাজার পিলি পানের বরজ এবং আটটি পরিবারের বসতবাড়ি আগুনে পুড়ে গেছে। অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।
তিনি আরও বলেন, পান একটি অর্থকারী ফসল এবং দীর্ঘ মেয়াদী। বিশেষ করে প্রচন্ড তাপদাহে মাঝে মাঝেই পানের বরজে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় এসব পানচাষীরা। পান চাষের উপর কোনও বীমা নেই। বীমার নিয়ম থাকলে চাষিরা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতেন। তবে এসব খোলা আকাশের নিচে বসবাস কারীদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

মিরপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার জানান, বিশাল এলাকাজুড়ে পান বরজ ও বরজের সাথে থাকা আটটি পরিবারের বসতবাড়ি অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে। আমরা খবর পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের দেড় ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই।

মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হারুন-অর রশিদ বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ১১টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে ৫০ লক্ষাধিক টাকার পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতি পরিবারের মাঝে ২০ কেজি চাউলসহ তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে এবং পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের সহায়তায়, তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।

রিলেটেড পোস্ট

Leave a Comment